বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

হাম হাম অভিজ্ঞতা

হাম হাম সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কমলগঞ্জ থানার এক পাহাড়ি আকাবাকা নদী পেরিয়ে এক অপরুপ ঝরনা । । । 
যতটা অপরুপ তার থেকেও কয়েক হাজার গুন কঠিন সেখানে যাওয়া। । ।আপনার মস্তিষ্ক যতটা কঠিন ভাবতে পারে এটা তার থেকেও অনেক অনেক কঠিন । আপনি যদি ভেবে থাকেন জীবনে অনেক কিছু দেখে ফেলেছেন অথবা জীবন কি তা খুব ভালো ভাবে জানেন বা ডিসকভারীর ম্যান ভারসেস ওয়াইল্ড দেখে অনেক কিছু শিখে ফেলেছেন তবে বলবো একবার হাম হাম ঘুরে আসুন বুজতে পারবেন আপনার জানা ও বোঝার সবে শুরু । । হাম হাম নিয়ে আমার এবং আমার বন্ধুদের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি ।
হাম হাম যাবার জন্য আমরা সাত বন্ধু সিলেট থেকে খুব ভোরে শ্রীমঙ্গলের ট্রেনে উঠে রওনা দিই। এবং যথারীতি সেই বৃষ্টির শহরে তুমুল বৃষ্টির মধ্যে পৌছে যায় । । 
তারপর লোকজনের কাছে শুনে একটি সি এন জি ৬০০ টাকায় ঠিক করে ফেলি । । । তখনও কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি যে আমরা জীবনের কতটা ঝুকি নিচ্ছি ???????
আড্ডা গল্প করতে করতে পাহাড়ী রাস্তায় আকা বাকা পথে সি এন জি নিয়ে আগাচ্ছিলাম আর বার বার ড্রাইভার মামাকে বলছিলাম মামা কত কত দুর????উনি সামনে সামনে বলতে বলতে প্রাই ২ ঘন্টার ও পরে যতদূর সি এন জি যায় তত দূর পৌছে দিলেন । । 
নেমে দেখি তুমূল বর্ষন। । শুরুতে ভেবেছিলাম কোন গাইড লাগবে না , , , তবুও মামা একজন গাইড দিয়ে দিলেন । । । 
৪০০ টাকার বিনিময়ে যিনি যেতে রাজি হয়েছিলেন, , , 
মোবাইল মানিব্যাগ যা ছিল সব পলিথিনে মুড়ে ব্যাগে রেখে হাটা ধরলাম । । । । মাথায় পলিথিন ও বেধে নিয়েছিলাম । । । ।শুরুতে পাহাড়ি চা বাগানের ভিতর দিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে হাটছিলাম আর মানুষ জন আমাদের অবাক হয়ে দেখছিল হয়তবা পাগল ভাবছিল কারন এরকম প্রতিকূল পরিবেশে বৃষ্টির ভেতর কেউ যায় নাকি???????
শীঘ্রই চা বাগান শেষ হয়ে গিয়েছিল তারপর শুরু হয়েছিল দুর্গম পথ । । । বুনো গাছপালা আর সরু রাস্তা পিচ্ছিল কাদা মাখা । । । । । অল্প আলো আর ভেজা রাস্তা। । । । 
এভাবেই চললো কিছু সময় । । । ততক্ষনে সবাই আমরা একটা করে বাশের খুটি ম্যানেজ করে নিয়েছিলাম । । । খুব তাড়াতাড়ি একটা নদী অথবা পাহাড়ি খাল ও  হতে পারে এসে গিয়েছিল । । । পার হলাম । । । এই এক নদী যে আমরা কতবার পার হয়েছি জানি না । । পার হয়ে একবার এপারে আরেকবার অপারে কোথাও বুক পানি কোথ কোমর কোথাও গলা পানি। । । । দ্বিতীয়বার পানি থেকে উঠে হঠাত আমার পায়ে চোখ যায় আমার দেখি । । । আগে থেকেই জেনেছিলাম এখানে প্রচুর জোক আছে , , , , ভালো করে দেখি পায়ে কাল কি যেন লেগে আছে নিচু হয়ে দেখি জোক । । । সবাই দাঁড়ায় গেল। । । জোক কি ভায়ানক কামড়ে আছে তো আছেই । । কিছুইতেই সরানো যায় না । । অনেক কষ্টে ছাড়ালাম ততক্ষনে পিছনে তাকায় দেখি আমার বাকি বন্ধুরাও জোক ছাড়াতে ব্যাস্ত , , , কেউ ভয়ে চিৎকার ও করেছিল । । । মুহূর্তে জোকের প্যানিক ছড়িয়ে গেল সবার মাঝে । । । । সরু পথ ধরে আবারো হাটা শুরু করলাম । । । দশ সেকেন্ড পর পর পায়ে খেয়াল করছিলাম আর জোক সরাচ্ছিলাম । । । বার বার বার অই একি নদীতে নামছিলাম উঠে জোক পরীক্ষা করছিলাম । । । আর ক্লান্তিহীন ভাবে হাটছিলাম । । । কোথাও বড় বড় পাথরের মাঝ দিয়ে তীব্র নদীর স্রোতে কোথাও পাহাড় ধরে সরু বাশের উপর দিয়ে হাটছিলাম। । । একটু পিছলে গেলে মরার ভয় ছিল। । । । মামা বার বার সামনে সামনে বলে নিয়ে যাচ্ছিল । । । । কোথাও ঘন জঙ্গল । । এভাবে নদী জঙ্গল জোক বৃষ্টি পেরিয়ে আগাচ্ছিলাম , , , ,আর জোক মজা করে রক্ত নিচ্ছিল । । । ।বার বার মনে হচ্ছিল । ফিরে যায় কিন্তু অন্যদের দিকে তাকিয়ে আমি তা বলতে পারিনি । । । খুব ভয় হচ্ছিল মনে হচ্ছিল বেচে ফিরে আসতে পারবো না । । ।নির্জন নদী ধরে হাটতে হাটতে প্রায় তিন ঘন্টা পর হাম হাম নামক ঐ ঝরনা দেখে চোখটা জুড়িয়ে ছিল। । । সবাই জামা কাপড় খুলে দেখে নিচ্ছিল জোক আছে কিনা। । । হাম হাম ঝরনা এত সুন্দর আমি লিখে বোঝাতে পারব না । । । ।পানির পতনের শব্দ । । । । কয়েক বন্ধু নেমে গেল পানিতে গোছলের উদ্দেশ্যে । । ।একজন শুধু উঠেছিল প্রায় ২০০ ফুট উপরে যেখান থেকে পানি পড়ে। । । ।কিছু ফটো তুলেছিলাম। । । মাত্র ১০ - ১৫ মিনিট ছিলাম । । । । তারপর ফেরার পালা অই পথে আর না এবার আমরা ফিরে ছিলাম পাহাড় হয়ে। । । ।কি খাড়া আর উচু পাহাড় । । । আর কদায় ভেজা । । । । উঠতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। । । ।বার বার মনে হচ্ছিল ফিরে আসতে পারব না। । । শুধু হাটছিলাম আর ভাবছিলাম । । । । কখন ফিরবো। । । আমার এক বন্ধু খুব খুব বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম তাকে নিয়ে আমরা অনেক ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলাম। । । ।তার হার্ট বিট অনেক বেড়ে গিয়েছিল। । । । 
আর একটু পর পর জোক ছাড়ানো। । । উচু পাহাড়ে উঠতে থাকি ত থকি শেষ আর হয় না । । । । । ।উঠি নামি আর উঠি নামি । । । ।মামা বার বার তাগেদা দিচ্ছিল , , একবার যদি ওখানে অন্ধকার হয় বিপদের শেষ থাকবে না, , , , আর আমরা ভয় পাচ্ছিলাম যদি মামার কিছু হয় বা পথ ভুল করে তাইলে ত আমরা সব গুলা শেষ । । । । এভাবে যে কত গুলা পাহাড় পেরিয়েছি মনে নেই। । । । তারপর আবারো সেই নদী তবে এবার নদীর উপর সাকো ছিল। । । কিন্তু তার অবস্থা বিশেষ ভালো ছিল না । । ।একটু ভুল হলেই জোকের নদীতে। । এভাবে ৬ থেকে ৭ টা ব্রীজ পার হলাম। । । তবে আসার সময় তুলনা মূলক ভাবে কম জোকে কেটেছে। । ।একসময় কয়েকজন মানুষ কে দেখলাম, , ,তাদের দেখে এতটাই ভালো লেগেছিল । । । । মনে হচ্ছিল এই তো ফিরে যেতে পারব। । । । একসময় পাহাড় শেষ হল। । ।এবার এক লোকালয়ে এক চায়ের দোকানে এসে আমরা সবাই খুব ভালো করে জোক পরীক্ষা করলাম। । । লজ্জ্বা খানিকটা বিসর্জন দিয়ে। । । তারপর চা খেয়ে আবার রওনা হলাম। । ।তখন দেখি আমার এক বন্ধুরে একটা জোক তখন ও কামড়ে আছে সুতার মত জোক রক্ত খেয়ে আঙ্গুলের মত মোটা হয়েছিল। । ।। মেরে ফ্রেশ কোনরকম হয়ে আবার হাটতে শুরু করেছিলাম। । ।তখন একদমই ভয় করছিল না , , কেননা লোকালয়ে পৌছে গিয়েছিলাম । ।। ।এভাবেই আর দেড় ঘন্টা হাটার পর সেই বাজারে আসলাম যেখান থেকে রওনা হয়েছিলাম। । । দেখি আমাদের সি এন জির মামা আছেন। । তিনি সহ পুরো গ্রামের মানুষ ভয় পেয়েছিল কারন এমন পরিবেশে কেউ তো যায় না আর সেখান থেকে ফিরে আসা টাও খুব কঠিন ছিল । । । বাজারে এসে কোনরকম খেয়ে সি এন জিতে রওনা হলাম শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে আসার আগে অই গাইড মামা কে ৪০০ টাকার জায়গায় ৫০০ দিয়েছিলাম। । । তারপর চলতে শুরু করছিল সি এন জি একদম ফাকা গ্রামের রাস্তা ধরে । । । মামা বার বার বলছিল যায়গাটা ভালো না খুব ডাকাতি হয়। । । আমার খুব ভয় করছিল। । । । । প্রায় ২ ঘন্টারও পর পৌছালাম শ্রীমঙ্গল । । । মাঝখানে অন্তত ১০০ বার সি এন জির স্টাট বন্ধ হয়েছিল। । । তখনও খুব জোকের ভয় করছিল। । । ।আমাদের সিলেট ফিরতে হবে। । । । পুরা শরীর কাপড় ভেজা ছিল । । । ভেজা কাপড় শুকিয়ে আবার ভিজেছিল। । । সিলেট যাওয়ার কোনকিছু পাচ্ছিলাম না । । তাই বাস ধরে গেলাম মৌলভীবাজার। । । সেখানে গিয়েও সিলেট যাবার মত কিছু পেলাম না রাত অনেক হয়ে যাচ্ছিল। । । এর মধ্যে আমার এক বন্ধু দেখে তার হাতে একটা জোক। । খুব ভয় লাগছিল। । । শুধু মনে হচ্ছি ব্যাগের মধ্যে জোক আছে। । । তারপর আবার সি এন জি নিয়ে গেলাম শেরপুর শুনলাম ওখানে সিলেটের বাস পাব । । । ।ভেজা কাপড়ে গেলাম শেরপুর। । । বাস পেলাম না ভাগ্য ভালো ছিল , , , একটা ট্রাক কে হাত দেখাতেই থামল কথা বলে উঠলাম। । ।বাতাসে ভেজা কাপড়ে ট্রাকের ডালায় প্রায় জমে যাচ্ছিলাম। । । আমাদের কে খুব পাট নিয়ে একটা বাস ওভারটেক করেছিল কিছু সময় পর দেখলাম এক্সিডেন্ট করে পড়ে আছে। । । যাক ট্রাক আমাদের সিলেট বাইপাসে নামায়ে দিল। । । । 
অখান থেকে আবারো সি এন জি নিয়ে সরাসরি মদিনা মার্কেট । । । সি এন জি তো যাবেই না , , উনাকে রক্ত দেখাই রাজি করাইছিলাম। । । । রাত ২ টা বাজে মদিনা মার্কেটে নেমে খাওয়া দাওয়া করে বাসায় ফিরে গরম পানি দিয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়েছিলাম, , , , ,আর বার জোক চেক করছিলাম। । । । । 
জীবন কি জিনিষ সেইদিন বুঝেছিলাম। । ।আজো ভাবি কই গিয়েছিলাম। । । পরে জানতে পারি অইখানে নাকি প্রচুর ভাল্লুক ছিল। । । মামা আমদের বলে নি বললে হয়তবা অনেক ভয় পেতাম। । । প্রায় ৭ ঘন্টা হেটে জীবনে যা অরজন করেছি তা সত্যিই অনেক কিছু। । । । হয়তবা আর কোনদিনই সেখানে যাব না । । । । কিন্তু এই চোখ যা দেখেছে কোন দিনই সে তা ভুলবে না। । । ।

বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৬

নাগরিকতা কিংবা রক্তাক্ততা

শক্তি ক্রমশই ফুরিয়ে আসছে, কমে যাচ্ছে সূর্যের আলো,বাতাসে বাড়ছে কার্বনের আধিক্য। জ্বালানি তেলে পুড়ে যাচ্ছে নগর। ভাঙ্গা ইটের কাঠানোয় দাঁড়িয়ে থাকা ভবন গুলো স্থায়িত্ব হারাচ্ছেই।চাঁদ উঠেছে ঐ দিকের আকাশে, নিভে গেছে তারাদের আলো আলো জ্বলা হেডলাইটের জ্বীপ ভর্তি স্বসস্ত্র সৈনিক, লাল আগুনের ধোয়া উড়ে যাচ্ছে সামনেই।আকাশে গোলা বারুদ, যুদ্ধ বিমান পাবলিক এয়ারপোর্টে। সাইরেন বাজিয়ে যাচ্ছে নগর পুলিশ। ও ধারেই ওদের ক্যাম্প, আর্তচিৎকার আর বেয়ানেট এর আঘাতে রক্তে জমে যাচ্ছে ব্যারাকে ব্যারাকে, রেডিও তরঙ্গে নেতার জ্বালাময়ী ভাষনে কেঁপে উঠছে সাউন্ড বক্স,বাতাসে রক্তের গন্ধ, শকুনে খুড়ে খাচ্ছে মাংশ, রাস্তা ফাঁকা, নগর ফাঁকা ,ফাঁকা শোবার ঘর, শব্দ নেই আলো হাতড়ে যাচ্ছে ভীতু চোখ গুলা সামনেই চেকপোস্ট ,তারপর আবারো চেকপোস্ট, আস্ত্রধারী মিলিটারীরা, হেরে যাচ্ছে অদম্যতা,সাহস আর দুইটা চোখ। বুকে হাত মাইকে গান উপরে পতাকা দূর দৃষ্টিতে জ্বীপ, এগিয়ে যাচ্ছে সময় কমে আসছে খাবার,আকাশ ছোয়া দামের বাজারে নামানো শাটার। রণসঙ্গীতে কাপছে বুক, না ঘুমানো চোখে শহীদের রক্ত। অস্ত্র নেই ট্রেনিং নেই খাবার নেই আশ্রয় নেই পিঠে বয়ে চলা সঙ্গীর লাশ। বুকে সাহস আর অন্তরে দেশপ্রেম। মারা যাচ্ছে মানুষ। জননীর প্রতি অত্যাচারে বেড়ে যাচ্ছে ঘৃণার মাত্রা, সামনেই লাল আর সবুজ আর তারো সামনে শহীদের কাফন, শহীদের রক্তের কসম দেশ এবার স্বাধীন করবোই, আর আমরা করেছি।

My Favourates

নৈঃশব্দবতী ০১

আমার   প্রায়ই   সেই   রাতটার   কথা   মনে   পড়ে ,  সেই   দীর্ঘ   রাতটার   কথা ,  প্রতিটি   শীতের   রাতের   যোগফলের   থেকেও   দীর্ঘ   সেই   ...