শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০১৪

ব্রেক আপ

আশকার সাথে আমার ব্রেক আপটা খুব সাদা মাটা ভাবেই হয়ে যায়। আর আট দশটা প্রেমের মত খুব ঘটা করে রিলেশন ব্রেক হয় নি আমাদের খুব ঝগড়া-ঝাটির পর পুনরায় মিলে যাওয়ার চেষ্টাই বিফল হয়ে যে ব্রেকটা হয়েছে তাও না খুব সাধারন কয়েক লাইনের একটা এস এম এস দিয়েই আমাদের শেষ টা হয়।কোন এক তপ্ত রোদেলা দুপুরে আমি তাকে ফার্মগেট থেকে মনিপুরিপাড়া পৌছে দিই আর ঐটাই ছিল আমদের এখন পর্যন্ত শেষ দেখা।তারপর আজ অবধি কেটে গেছে ৬ টি মাস।একটি বাক্যও বিনিময় হয় নি আমদের হয় নি একটি এস এম এস ও চালাচালি।
আশকার সাথে ব্রেকটা যেমন আমার খুব সাধারন ভাবেই হয়েছে তেমনি রিলেশন টাও খুব অদ্ভুদ ভাবেই হয়ে ছিল।ওর সাথে আমার রিলেশান হওয়ার কোন কথাই ছিল না কেননা প্রথমত আমরা সমবয়সি ছিলাম না আমরা একই এলাকায় থাকতাম না । এমনকি আমরা একই স্কুলেও পড়তাম না। তবুও রিলেশান টা হয়ে গিয়েছিল কিভাবে যেন।  কোন এক ঈদের পরের দিন বাইকে ঘুরছিলাম আমরা আর তখন বাইপাসে আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যায় তার অনেক দিনের পুরানো এক বান্ধবীর সাথে আর সে মেয়ের ছোটবোন ছিল আশকা ।আর আশকা আসার আগের কাহিনীটাও ছিল খানিক টা মজার খানিকটা দুঃখের । আমি যশোরে যাদের সাথে চলাফেরা করতাম তাদের বেশির ভাগেরই বালিকা বান্ধবী তথা গার্লফ্রেন্ড ছিল দেখা যেত কখনো এমন হত যে ওরা সবাই ফোনে কথা বলত আর আমি একা একা মোবাইল চাপতাম আর আমার এই অবস্থাটা হয়ত আমার বন্ধুদের কষ্ট দিত আর তাই ওরা চাইত যে আমার ও একটা প্রেম হয়ে যাক আমি ওদের মত ফোনে কথা বলি আর সেই থেকে ওরা আমার জন্য খুজতে থাকে একজন বালিকা ফেসবুক থেকে শুরু করে যে যেমনে পারসে আমার জন্য প্রচারনা করেছে আর সেই থেকে ফ্রেন্ড এর বান্ধবীর ছোট বোনের সাথে রিলেশন হয়ে যায় আমার কোন এক মধ্য রাতে মাত্র দুই দিনের কথা বলাতে জানি না এত তাড়াতাড়ি কিভাবে হয়ে গিয়েছিল ।
দশ মাসের রিলেশনে ও আমাকে দিয়েছে অনেক কিছুরই প্রথম অভিজ্ঞতা প্রথম চুম্বন প্রথম কাছে আসা প্রথম একসাথে হাত ধরা প্রথম একসাথে ঘুরতে যাওয়া প্রথম এক রিকশাতে দুই জন ঘোরা প্রথম স্পর্শ ওর কাছ থেকেই পায়। সত্য বলতে আমার প্রথম প্রেম ও কিন্তু প্রথম ভালবাসা না। জানি না আমি ওর প্রথম ছিলাম কিনা কিন্তু ও ছিল আমার প্রথম প্রেম।
দশটা মাস আমরা কিভাবে পার করেছি আমার ঠিক বোধগম্য হয় না । মাসের সংখ্যা টা দশ হলেও আমার কাছে ওটাকে ঠিক অনন্তকালই অনুভূত হয়। শুরুটা মোটেও খারাপ ছিল না আর আট দশটা প্রেমের মত খুব রঙ্গিন প্রেম ছিল আমাদের প্রেম অবশ্য সেটা খুব অল্প দিনের জন্যই টিকে ছিল।সত্য বলতে আমরা যেটা করেছি সেটা প্রেম ছিল কিনা আমার ঠিক অবিশ্বাস হয়। প্রথম কয়েকটা মাস বেশ ভালই ছিল তারপর যে কোন কারনেই ওটা খুব দুর্বল হতে থাকে। রঙ্গিন সপ্ন দেখা গুলা থেমে যেতে থাকে ওর পক্ষ থেকে হয়তবা আমারই কারনে । আমার ঠিক মনে পড়ে না । আমি চট্টগ্রামে বেশ ব্যাস্ত জীবন কাটাতে থাকি আর ক্রমশ ই দুর্বল হতে থাকে প্রেম। তত দিনে ও অবশ্য বেশ এডিক্টেড হয়ে পড়ে আমার প্রতি আমার সাথে একটু রাগারাগি হলেও হাত কাটা ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়া ইত্যাদি করে ফেলত ও। আমার ঠিক ভয় হত।আমি খুব অসহায় লাগত। নিজেকে অনেক ক্ষুদ্র লাগত। মনে হত জীবন টা একেবারেই থেমে গেছে এর আর কিছুই হবার নেই। মনে হত বেশি দিন বাচব না । আমি মনে প্রানে চাইতাম ওর কাছ থেকে বেরিয়ে যেতে খুব চাইতাম।সে জন্য যোগাযোগ কমিয়ে দিতে থাকতাম । রোমান্স ছিল না দায়িত্ব বা কর্তব্য থেকে তিন চার দিন বাদে একদিন ফোন দিতাম।বুঝতাম ও অনেক রেগে বা দুঃখে আছে কিন্তু সত্য বলতে আমার পক্ষ থেকেও কিছুই করার ছিল না আমি ঠিক নিরুপায় ছিলাম।এর মাঝে ও একদিন রাতে হঠাত ফোন করে বলে যে তার বাসা থেকে নাকি বিয়ে ঠিক করছে তাই সে পালায়ে ফ্রেন্ডের বাস্য আসছে আর আমাকে তক্ষুনি তাকে বিয়ে করতে যেটা আমার পক্ষে পুরা মাত্রাই অসম্ভব ছিল আমি বাবা মায়ের এক মাত্র ছেলে অনেক প্রত্যাশা তাদের আমাকে ঘিরে আমি এমন কাজ করতে পারি না যেটা তাদের কষ্ট দেয়।তাই আমি বুঝিয়ে শুনিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এভাবেই চলে যাচ্ছিল।এর মধ্য রমজান মাস এসে যায় ২০১৩ সালের। বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হয় আমি ঢাকা যায় ,ওর সাথে একবার দেখা করার জন্য ওকে আসতে বলি ও রাজি হয় আমরা ফার্মগেটে দেখা করি। আমার সাথে আমার এক কাজিন ও ছিল । তাকে বসিয়ে রেখে  আমি ওকে মনিপুরি পাড়ায় ওর বাসা পর্যন্ত আগায় দিয়ে আসি আর পরের দিন আবার দেখা করার কথা বলে চলে আসি।রাত অবধি আড্ডা দিয়ে বাসায় এসে একটা মেসেজ পায় আশকার । তাতে লেখা ছিল তুমি আমাকে আর ফোন দিবা না আমি তোমার সাথে আর রিলেশান রাখতে পারব না। আমি তার কোন রিপ্লাই বা ফোন দিই নাই… দিন টা ছিল ২১-০৭-২০১৩ । তারপর আজ ১৮-০১-২০১৪ আজ অব্ধি আমি তাকে আর ফোন দিই নি এর মাঝে সে আমাকে অনেক বার ফোন মেসেজ দিয়েছে আমি কোন রিপ্লাই বা আন্সার করি নাই। একসময় বাধ্য হয়ে তার নাম্বার আমি ব্লাক লিস্টে ফেলে রাখি তখন সে নিত্য নতুন নাম্বার দিয়ে আমাকে ফোন দিতে লাগল আর আননোন নাম্বার আমি রিসিভ করা পুরাপুরি বন্ধ করে দিলাম। সব শেষ সে আমাকে থার্টি ফার্স্ট নাইটে অনেক দুঃখ ভরা মেসেজ দেয় যেটা দেখে সত্যিই আমার মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য মনে হয়েছিল যে আমি কি ভুল করলাম ওকে ছেড়ে দিয়ে । তারপর রাগে দুইটি ফোন থেকে দুইটা সীম জিপি আর এয়ারটেল নিয়ে ভেঙ্গে ফেললাম একবারে।তারপর এই আছি। এই ঘটনার কয়েক দিন বাদে আমার অনেক পুরানো আমলের এক স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে দেখা সে আমাকে আশকার কথা জিজ্ঞাস করে আমি তাকে বলি সব। তারপর তার সাথে কথা বলে আমি যা বুঝলাম সে হচ্ছে আশকার নতুন বয় ফ্রেন্ড। আমি তাকে কংগ্রেটস করলাম মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম। আমি সত্যিই অনেক খুশি হয়েছিলাম। আমি চাই আশকা অন্য কাউকে নিয়ে অনেক সুখি হোক , আমি হয়তবা ঠিক তার যোগ্য ছিলামা না । বা ঈশ্বর ও হয়তবা এতা চাইতেন না আমার মনে হয়।

অনেক দিন বাদে সত্যিই অনেক ভাল লেগে ছিল সেদিন ।ওদের প্রেম ভালবাসা অনেক রঙ্গিন আর সুন্দর হোক এই কামনায় আমি করছি। শুভ প্রেম হোক ওদের। । । ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

My Favourates

নৈঃশব্দবতী ০১

আমার   প্রায়ই   সেই   রাতটার   কথা   মনে   পড়ে ,  সেই   দীর্ঘ   রাতটার   কথা ,  প্রতিটি   শীতের   রাতের   যোগফলের   থেকেও   দীর্ঘ   সেই   ...