শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০১৪

চট্টগ্রামে থাকি

চট্টগ্রামে থাকার গল্পটা(আসলে এটাকে ঠিক গল্প বলা যায় না তবুও ভাল লাগে গল্প শব্দটা শুনতে তাই এখানে গল্প শব্দটাই ব্যাবহার করছি) কিভাবে যেন হঠাৎ করেই শুরু হয়ে গিয়েছিল কোন এক বছরে একুশে ফেব্রুয়ারী সারা দিন বাস ভ্রমন করে যশোর থেকে চট্টগ্রামে এসে ভর্তি হয়ে গেলাম দুঃখিত চুয়েটে এসে ভর্তি হয়ে গেলাম তার পর থেকে গল্পটা শুরু হয়ে গেল একদম নবীন এক শিশুর গল্প যে নতুন করে বেড়ে উঠতে থাকলো চট্টগ্রামে, চট্টগ্রামের আলোতে চট্টগ্রামের বাতাসে ।
আর সবার মত সপ্ন আমিও দেখতাম ঢাকায় থাকবো , জীবনের ২০টা বছর কাটিয়ে দিয়েছিলাম ছোট্ট এক মফস্বল শহরে যে শহরের প্রতিটি রাস্তা প্রতিটি গলি প্রতিটি বাড়ি আমার কাছে যাদুর মনে হত আমি অবাক হয়ে যেতাম ভাবতাম এত মায়া কেন এই শহরের এত ভালবাসা !!!! তবুও জীবনের বৃহৎ স্বার্থে আমাকে তাকে ছাড়তে চেয়েছিলাম ভেবেছিলাম ঢাকার কোন এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে  ভর্তি হয়ে যাব আমার বাবা মা তাই চাইত। চট্টগ্রামে থাকব এমন কোন পরিকল্পনা আমার কখনো আসে নি চট্টগ্রামে থাকার গল্পটা তবুও হয়ে গিয়েছিল।অন্য সবার মত আমি চট্টগ্রামে থেকে গেলাম।
চট্টগ্রামে থাকাটা শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে হঠাৎ করেই আমার কাছে মনে হয় আমি যশোরে একদিন ঘুম দিলাম আর ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমি চট্টগ্রামে এক টা বিশাল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আর অসংখ্য অপরিচিত মুখ আমি অবাক হয়ে ভাবতাম এত মানুষ কেন!!!! আমার পাশে শুধু একজন পরিচিত মানুষ ছিল সৌরভ ভাই আমাকে যে চট্টগ্রামে পৌছে দিতে এসেছিল। শক্ত করে আমার হাত টা ধরে পৌছে দিয়েছিল অডিটোরিয়ামে আমি হতবাক পথ ভোলা এক শিশুর মত ঢুকে পড়লাম অডিতে যে শিশুটি জানতও না কোথায় গিয়ে বসতে হবে কার কাছ থেকে শুনতে হবে কোথায় তার ডিপার্টমেন্ট।।তবুও সে বসে গিয়েছিল শেষের দিকে একটা চেয়ারে যেখানে তার ফোনে পরিচয় হওয়া দুই ডিপার্টমেন্ট এর বন্ধুর সাথে...
তারপর তাদের সাথে ছেলেটা বারতলা বিল্ডিং এ পৌঁছে গেল কখন ঠিক তার মনে হয় না।। অরিয়েন্টেশন হয়ে গেল ছেলেটা দেখে নিল একটা বিশাল রুম ৩০ টা চেয়ার অসংখ্য টেবিল আর কয়েকশ টিউব লাইট ঝোলানে ছেলেটা অবাক হয়ে ভাবলো একটা রুমে এতগুলা টিউব লাইটের কি দরকার!!!!
কিছুক্ষন পর ছেলেটা পানি খওয়ার জন্য বের হল আর দরজার কাছে দুই জন তাকে আটকালো অস্মভব ঝাড়ি দিল নবীন ওই শিশুটি এক বারের জন্য বুঝতেও পারলো না কি তার ভুল ছিল বা কি সে করেছিল তবুও তার চট্টগ্রামে থাকার গল্পটা কিছুতেই থেমে গেল না ঠিক শুরু হতে লাগল।।
সারা দিনটা কেটে গেল হলের ছিট পাওয়ার জন্য জন্য হল প্রোভোস্ট দের কাছে নিজেকে প্রমান করতে হল হ্যা আমি অনেক দূর থেকে এসেছি আমার চট্টগ্রামে কেউ নেই তবুও স্যার দের ঠিক বোঝানো গেল না অন্য অনেক গুলা অপরিচিত ছেলের মত আমিও একটা রুম পেয়ে গেলাম যেটাতে ৬ জন থাকার কথা থাকলেও সেখানে ১২ জন কে থাকতে দেওয়া হল তবুও আমার চট্টগ্রামে থাকাটা আটকে গেল না।

ওই যে শুরু হল থাকা তারপর থেকে আজ অব্ধি কেতে গেল ২ টা বছর চট্টগ্রামে থেকে গেলাম ভালবেসে ফেললাম তাকে।।যশোরের পর যাকে আমার ২য় হোম বলে মনে হয়...
দুই বছরের চট্টগ্রাম বা চুয়েট বা হল লাইফের প্রাপ্তি টা অনেক।। অন্য অনেকের মত একটা ভাল গুন আমার নেই তা হচ্ছে চট করে কারো সাথে মিশে যাবার ক্ষমতা ব্যাপার টা হতে একটু সময় লাগে।। তবুও এমন কত জন কে পেয়ে গিয়েছিলাম যাদের কে আমার টেনে নিতে হয় নি তারাই আমাকে তাদের কাছে টেনে নিয়েছিল এই তো তাদের সাথে ওই নবীন শিশুটির পথ শুরু হয়ে গেল সবাই নবীন ছিল কেউ কারো থেকে বেশী অভিজ্ঞ ছিল না তবুও সবাই সবাইকে ধরে ছিল।। দুই বছরের লাইফের তিক্ত অভিজ্ঞতাটাও নেহায়েত কম ছিল না র‍্যাগ এর শিকার ওই ছেলেটা অসংখ্য বার সিনিয়র দের হাতে নাস্তানাবুদ হয়েছে চরম মাত্রায় র‍্যাগিং শিকার ঐ ছেলেটা তবুও চট্টগ্রামে থেকে গিয়েছিল জানি না কার টানে কিসের টানে ।।
ছেলেটা যে সাবজেক্টে পড়ে তার নাম হচ্ছে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা শহর আর গ্রাম নিয়ে তার পড়াশুনা ছেলেটা শহর খুব ভালবাসে কিন্তু গ্রাম তার খুব একটা ভাললাগে না গ্রামের অসাধারন ছবি তাকে মুগ্ধ করে কিন্তু তবুও গ্রাম তার কিছুটা অপ্রিয়। তবু ছেলেটা ঠিক শুরু করে নিয়েছিল শুরুর দিকে তার ছিল ব্যাসিক ডিজাইন হাবি জাবি সব আকাআকি ছেলেটা আকাআকি একদমই ভালবাসতো না কারন আকাকাকি সে ভাল পারেনা তারপর কিছু দিন পর ছেলেটার সাব্জেক্ট টা ভাল লেগে গেল যদিও কিছু বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে যায় ছেলেটা ঢাকায় থাকার শেষ অপচেষ্টা হিসাবে আরেক বার সুযোগ নেওয়ার জন্য একদিন সবার থেকে বিদায় নিয়ে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিয়ে সি এন জি ডাকতে চলে গেল যদিও তাকে সবাই খুব বোঝালো তবুও সে কিছুতেই বুঝলো না কিন্তু দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্য যাই বলি না কেন ঐ দিন একটা সি এন জি ও সরাসরি জি ই সি যেতে রাজি হল না ছেলেটা একটা  আফ লিটার ফান্টা কিনল তারপর উলটা দিকে হেটে রুমে ফিরে এসে বলল যাব না থেকেই গেলাম ওই সেই যে থেকে গেলাম আর আজও আছি একন এই যে আমি আমার হলে বসে লিখছি এর মধ্য কিভাবে যেন কেটে গেল কিছুতেই কিছু বুঝতে পারলান না তবুও।
২ বছর চট্টগ্রামে থেকে যেমন অনেক ভাল বন্ধু পেয়েছি তেমনি অনেক মজার দিন রাত কাটিয়েছি কত জায়গায় টুর দিয়েছে কত রাত না ঘুমিয়ে গল্প করেছি প্রজেক্টের কাজে কত রাত জেগেছি কোন দিন আফসোস হয় নি কেন থেকে গেলাম...
তারপর এই যে ভালই আছি মুল লেখার উদ্দেশ্য ছিল গতকাল আমাদের ব্যাচের মানে ১১ ব্যাচের ক্যাম্পাস লাইফের দুই বছর পূর্ণ হয়ে গেল যদিও মূল লেখা থেকে বের হয়ে এসে অনেক কথা বলে ফেললাম জানি এত বড় লেখটা তেমন কেউই কষ্ট করে এসে শুনবে না তবুও নিজেকেই বলে গেলাম না হয়।।
আমাদের ব্যাচের একটা নাম দিয়েছে সবাই পেলিনড্রোম ১১ । যদিও এই নামের একটা ব্যাখ্যা আছে পেলিনড্রোম মানে হচ্ছে এমন সংখ্যা যাকে আগে পিছে করলে কোন পরিবর্তন হয় না ১১ কে আগে পিছে করলেও কোন চেঞ্জ হয় না আমরা বিশ্বাস করি ১১ মানেই সবাই এক যতই বিন্যাস সমাবেশ করি না কেন ১১ এগারোই থাকবে তাই ১ দিন পরে হলেও বলছি শুভ জন্মদিন পেলিনড্রোম ১১...
ওবায়দুর রহমান সজল
০৮-০৫-২০১৪
চট্টগ্রাম

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

My Favourates

নৈঃশব্দবতী ০১

আমার   প্রায়ই   সেই   রাতটার   কথা   মনে   পড়ে ,  সেই   দীর্ঘ   রাতটার   কথা ,  প্রতিটি   শীতের   রাতের   যোগফলের   থেকেও   দীর্ঘ   সেই   ...