বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১২

একা একা

সময়টা ছিল ২০০৫ সাল।ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন ।বই পত্র পড়ার অভ্যাস ছিল আগে থেকে।কিন্তু একদিন বাসায় কিছু পুরানো বই এর সাথে হালকা লাল মলাটের একটা বই এ চোঁখ আটকে যায় আমার।বইয়ের উপরে লেখা ছিল 'একা একা ' মাঝের দিকে হুমায়ূন আহমেদ।তখন পর্যন্ত স্যারকে আমি চিনতাম না তেমনভাবে তবে নাম শুনেছিলাম আগেই।বইটা হাতে পড়া শুরু করেছিলাম শুরুথেকেই ভাল লাগছিল ।একবারের জন্য বিরক্ত লাগে নি।শুধু পরের পাতায় নতুন কি আছে তাই ভাবছিলাম।একটানে শেষ করে ফেললাম বইটা।এই তো স্যারের সাথে পরিচয় ।তারপর থেকে এই পর্যন্ত স্যারের অসংখ্য বই পড়ে ফেলেছি।প্রথম দিকে হিমু মিসির আলী শুভ্র এদের সাথে পরিচয় ছিল না একে একে পরিচয় হয় হিমু শুভ্র মিসির আলী মুহিব দপ্তরী কালীপদ মীরা আরো অনেকের সাথে।প্রতিটি উপন্যাসই যখন পড়তাম তখন মনে হত আমিও ঐ উপন্যাসের একজন আছি কিন্তু কেউ আমাকে দেখতে পাচ্ছি কিন্তু অন্যরা আমাকে দেখতে পাচ্ছে না কি অদ্ভুদ।স্যারের শঙ্খনীল কারাগার বইটা আমি প্রায় ৭ বার মত পড়েছি যতবার পড়েছি ততবারই কেঁদেছি ।কি করে একটা মানুষ এত ভাল লেখে? নন্দিত নরকে আমি চোঁখ বুজে এখনো দেখতে পায়।মেঘ বলেছে যাব যাব কোথাও কেউ নেই এইসব দিনরাত্রি একটা বাস্তব জীবনের খন্ডচিত্র।স্যার কত ভালো লেখে তা মাপার সামর্থ্য আমার নাই।হিমু পড়তে পড়তে প্রায় নিজেকে হিমু হতে মনে হয়েছে কিন্তু বাস্তবতার কাছে অবাস্তব হার মেনেছে বহুবার।মিসির আলী সাহেবকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হয়েছে শতবারের অধিক তবুও প্রশ্ন করতে পারি নাই প্রায় রাতে আমার মনে হত যে হিমুর সাথে একটু হেটে আসি ।মীরার মত কঠিন স্বভাবের একটা মেয়ের সাথে কিছুসময় গল্প করার।কিছুই হয়নি।উপন্যাস গুলা যখন পড়তাম তখন কেমন একধরনের অনুভূতি হত কথনো বলে আমি বুঝাতে পারব না।কত কি যে জেনেছি স্যারের বই পড়ে তার হিসাব আমি নিজেও জানি না।স্যারের একটা কমন চরিত্র ছিল গ্রামের একজন স্কুল মাস্টার থাকবে যে একা থাকবে একা রান্না করে খাবে আর মাঝে মাঝে অদ্ভুদ সব আচরন করবে।সায়েন্স ফিকশানগুলা ছিল তুলনাহীন ।খুব ইচ্ছা ছিল স্যারের সাথে একবার দেখা করার স্যারের সাথে কিছু কথা বলার ।স্যার এর সাথে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার।স্যার কে বলতাম স্যার আমি যদি আপনার হিমু হই আপনি কি খুব মাইন্ড করবেন?জীবনে আমি খুব কম সংখ্যক মানুষকে ভালবাসতে পেরেছি আর তার মধ্য স্যারের অবস্হান উপরে।আচ্ছা স্যার কি জানত তার এই ফ্যানটি তাকে কতটা ভালবাসত?না জানুক সমস্যা কি যাকে ভালবাসি তাকে প্রকাশ করবার তো দরকার নেই।তিনি না হয় নাই বা জানল কারন সব কিছু তো জানবার দরকার নেই।কিছু অজানা থাকা ভালো।আমি প্রায় হারিয়ে যেতাম একটি জগতে সেখানে আমি হিমু ভাই বাকের ভাই শুভ্র মীরা আপু মিসির আলী সাহেব বসে গল্প করছি কিছুতেই আমরা একমত হতে পারছি না সবাই।হিমু একে একে উদ্ভট সব সমস্যা দিচ্ছেন মিসির আলীকে আর তিনি সব সমাধান করে যাচ্ছেন।শুভ্র বসে মোটা মোটা ইংলিশ বই পড়ছে।আমি আর বাকের ভাই বাইকে ঘুরছি ।মীরা আপু ইজি চেয়ারে দুলছে।সবই কল্পনা তবুও কেন জানি আমার কাছে সবই বাস্তব মনে হত।আমার ব্যাক্তিগত ধারনা যেটা সেটা হচ্ছে এই সবগুলাই স্যার।প্রতিটি কথা তার যেমন মানুষকে আনন্দ দিতে পারে তেমনি পারে চোঁখে জ্বল এনে দিতে।অসংখ্যবার কেঁদেছি তার বই পড়ে কিন্তু কখনো মনে হয় নি কেন কাঁদছি?তিনি আসলেই যা করে গিয়েছেন তা বলার নেই। আর হলো না।যেদিন তিনি মারা গেলেন আগের দিনই খবর পেয়েছিলাম তার অবস্হা বিশেষ ভালো না ।খুব খারাপ লেগেছিল শুনে বারবার প্রার্থনা করেছিলাম।পরের দিন শুনলাম তিনি অসময়ে আমাদের ছেড়ে একা একা চলে গেলেন। প্রকৃতি বড় নিষ্ঠুর ।সবই ঠিক ঠাক চলছে শুধু স্যারই নেই।স্যারকে তার কোন কিছুই সমস্যা হচ্ছে না।ভাবতে পারছি না তিনি আর নেই।নতুন কোন উপন্যাস পাব না আর।এই যে স্যার একবার দেখুন তো আমি মিসির আলী হিমু শুভ্র সহ সবার চোঁখেই জ্বল স্যার এতগুলা মানুষের জ্বল একসাথে আনার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে? এই সংবাদে কি হয়েছে জানেন শুভ্র তার মোটা চশমাটা ভেঙ্গ ফেলেছে কারন সে আর এই পৃথিবী দেখবে না যে পৃথিবীতে আপনি নাই সেই পৃথিবীতে আপনি নাই সে পৃথিবী দেখার মানে নেই।মিসির আলী আর কোন রহস্য সমাধান করবেন না বলে তার মাথায় আঘাত দিয়ে মাথা ভেঙ্গে ফেলেছে।হিমু তার সবগুলা হলুদ পান্জাবি তে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।মাজেদা খালা আর কোনদিন মেজাজ খারাপ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।রুপা আর কোনদিন বারান্দায় হাটবে না খালু মাতাল হয়ে পড়ে আছে ।স্যার সবই সত্য আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না খুব কেঁদেছি সেইদিন যেদিন আপনি চলে গেলেন।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপনাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখব যেটা যুগ যুগ ধরে মানুষ পড়বে জানি না পারব কিনা তবে চেষ্টা করব।স্যার আপনি কি জানেন যে আপনি চলে যান নি আপনি আছেন কারন আপনার কোথাও যাবার অধিকার নাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

My Favourates

নৈঃশব্দবতী ০১

আমার   প্রায়ই   সেই   রাতটার   কথা   মনে   পড়ে ,  সেই   দীর্ঘ   রাতটার   কথা ,  প্রতিটি   শীতের   রাতের   যোগফলের   থেকেও   দীর্ঘ   সেই   ...